পূর্ব কোন ঘোষণা ছাড়াই আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় পার্টি অফিসে সফল উদ্ধার অভিযান সম্পন্ন হয়েছে গতকাল।
যুবলীগ ও ছাত্রলীগের বলিষ্ঠ অংশগ্রহণে পুনরুদ্ধার অভিযানে নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে দলটি কর্মীরা।
রাজনৈতিকভাবে টালমাটাল পরিস্থিতির মধ্যেও আওয়ামী লীগ আজ প্রমাণ করেছে যে, সংগঠিত ও দৃঢ় নেতৃত্ব থাকলে যে কোনো প্রতিকূলতা মোকাবেলা করা সম্ভব। পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই দলটি আজ সারাদিনব্যাপী সফলভাবে কেন্দ্রীয় পার্টি অফিস পুনরুদ্ধার অভিযান সম্পন্ন করেছে, যা শুধু একটি রাজনৈতিক স্থান পুনরুদ্ধারের ঘটনা নয়—বরং এটি একটি প্রতীকী বিজয়, যা দলের অটুট মনোবল ও মাঠ পর্যায়ে সংগঠনের গভীর শিকড়ের বহিঃপ্রকাশ।
৫ আগস্টের পর থেকে দেশের রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে এক ধরণের অস্থিরতা বিরাজ করছিল। বিভিন্ন জায়গায় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের ওপর নিপীড়ন, হয়রানি এবং অফিস ঘেরাওয়ের মতো ঘটনা চলছিল। এই প্রেক্ষাপটে আজকের অভিযান ছিল সাহস, ঐক্য এবং কৌশলগত দূরদর্শিতার এক অনন্য দৃষ্টান্ত। দলের পক্ষ থেকে কোনো পূর্ব ঘোষণা বা প্রচার ছাড়াই হঠাৎ করে এই অভিযান চালানো হয়, যা রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে একটি চমকপ্রদ কৌশল।
এই অভিযানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে আওয়ামী লীগের সহযোগী দুটি শক্তিশালী অঙ্গ সংগঠন—আওয়ামী যুবলীগ এবং বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। তারা সকাল থেকেই সুসংগঠিতভাবে পার্টি অফিসে জড়ো হতে শুরু করে এবং অত্যন্ত দ্রুত ও কৌশলী পদক্ষেপে পার্টি অফিস পুনর্দখলের কাজে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে।
যুবলীগের দৃঢ় অবস্থান
যুবলীগের নেতৃবৃন্দ ও কর্মীরা আজকের অভিযানে ছিলেন সবচেয়ে সরব ও সক্রিয়। রাজধানীর বিভিন্ন থানা ও ওয়ার্ড থেকে সংগঠনের কর্মীরা গোপনে একত্রিত হয়ে নির্দিষ্ট সময়ে পার্টি অফিসে প্রবেশ করেন। কোনোরূপ সংঘর্ষ বা অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি তৈরি না করেই তারা দায়িত্বশীলতার সাথে দখল কার্য সম্পন্ন করেন। যুবলীগ নেতাদের ভাষ্য অনুযায়ী, এটি ছিল একটি "শৃঙ্খলাপূর্ণ এবং কৌশলভিত্তিক অভিযান", যা ভবিষ্যতে অন্য দলের জন্য উদাহরণ হিসেবে কাজ করবে।
ছাত্রলীগের সমন্বিত ভূমিকা
বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নেতৃত্বাধীন ছাত্র সমাজও অভিযানটিকে সফল করার পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ পর্যায়ের নেতাকর্মীরা আজকের কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে প্রমাণ করেছেন যে, রাজনৈতিক সংগ্রামে শিক্ষার্থীদের ভূমিকা এখনো অপ্রতিরোধ্য। পার্টি অফিসে প্রবেশ, নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, দলীয় নেতাদের অবস্থান নিশ্চিত করা—এসব ক্ষেত্রে ছাত্রলীগ দায়িত্বশীল ও সংগঠিত ভূমিকা পালন করেছে।
দলীয় ঐক্যের প্রতিফলন
এই অভিযানকে কেন্দ্র করে একটি বড় রাজনৈতিক বার্তা স্পষ্ট হয়েছে—আওয়ামী লীগ এখনো মাঠে সক্রিয়, এবং নেতাকর্মীদের মধ্যে দৃঢ় ঐক্য বিরাজমান। অনেকদিন পর দলের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা এক প্ল্যাটফর্মে একত্রিত হয়ে একটি সফল অভিযান পরিচালনা করেছেন, যা শুধু পার্টি অফিস পুনঃউদ্ধারের সাফল্য নয়, বরং দলীয় মনোবল পুনঃপ্রতিষ্ঠার এক অনন্য নজির।
অবৈধ গ্রেফতার ও দমন-পীড়নের প্রতিবাদ:—
তবে এই সাহসী উদ্যোগকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য একটি দুঃখজনক ঘটনা ঘটেছে। আজকের শান্তিপূর্ণ ও সংগঠিত মিছিলে অংশগ্রহণকারী আওয়ামী লীগের ১১ জন নেতা-কর্মীকে পুলিশ কর্তৃক বিনা উস্কানিতে ও কোনো আইনগত ভিত্তি ছাড়াই গ্রেফতার করা হয়েছে। এই ঘটনাটি শুধু মানবাধিকার লঙ্ঘনেরই নয়, বরং রাজনৈতিকভাবে হয়রানি ও দমননীতির একটি স্পষ্ট উদাহরণ।
আমরা এই বেআইনি গ্রেফতারের তীব্র নিন্দা জানাই এবং অবিলম্বে গ্রেফতারকৃত নেতা-কর্মীদের নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানাচ্ছি। শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক কর্মসূচিকে দমন করার এ ধরনের অপচেষ্টা গণতন্ত্রের পরিপন্থী, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
জনমনে সাড়া ও ভবিষ্যতের বার্তা:—
সাধারণ জনগণ ও দলীয় সমর্থকদের মাঝে আজকের অভিযান এক ধরনের আত্মবিশ্বাসের সঞ্চার করেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইতোমধ্যেই এই অভিযান নিয়ে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে। অনেকে একে “রাজনৈতিক ঘুরে দাঁড়ানোর সূচনা” হিসেবে চিহ্নিত করছেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই উদ্যোগ আগামী দিনে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক গতিশীলতা ও জনসম্পৃক্ততা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
লেখক: শাখাওয়াত হোসেন ।
সাবেক ছাত্রলীগ নেতা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।