দীর্ঘ ছয় বছরের নির্বাসিত জীবন শেষে ১৯৮১ সালের ১৭ মে বঙ্গবন্ধুকন্যা আওয়ামী লিগ সভাপতি দেশে ফিরে আসেন। ১৭ মে শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস।
১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর বিদেশে অবস্থান করার কারণে ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান দুই বোন শেখ হাসিনা এবং শেখ রেহানা। ১৯৮১ সালের ১৭ মে বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা সেদিন ফিরেছিলেন বলেই বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফিরে লাখ লাখ জনতার সংবর্ধনার জবাবে শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ‘সব হারিয়ে আমি আপনাদের মাঝে এসেছি, বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথে তাঁর আদর্শ বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে দেশের জন্য আমি জীবন উৎসর্গ করতে চাই’।
ওই দিন বৈরী আবহাওয়া উপেক্ষা করে শেখ হাসিনাকে এক নজর দেখার জন্য কুর্মিটোলা বিমানবন্দর থেকে শেরেবাংলা নগর এলাকাজুড়ে লক্ষ লক্ষ জনতার ঢল নেমেছিল। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে জনতার স্রোত ছুটে এসেছিল বঙ্গবন্ধু কন্যাকে দেখতে। সেদিন স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত হয়েছিল বাংলার আকাশ বাতাস :ঝড় বৃষ্টি আঁধার রাতে আমরা আছি তোমার সাথে’ শেখ হাসিনা ভয় নাই আমরা আছি লাখো ভাই।' জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট হারিয়ে দিশাহারা আওয়ামী লিগ পেয়েছিল আলোর দিশা। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নতুন দিনের আগমনী বার্তা। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বাস্তবায়নের দৃঢ় অঙ্গীকার, বঙ্গবন্ধু হত্যা ও জাতীয় চার নেতা হত্যার বিচার, স্বৈরতন্ত্রের চির অবসান ঘটিয়ে জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা, সংসদীয় পদ্ধতির শাসন ও সরকার প্রতিষ্ঠার শপথ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী বাংলাদেশ আওয়ামী লিগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন শেখ হাসিনা।
বাংলার মানুষের হারিয়ে যাওয়া অধিকার পুনরুদ্ধার করতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বারবার সামরিক স্বৈরাচারের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করেছেন শেখ হাসিনা। আওয়ামী লিগ সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণের পর দীর্ঘ চার দশকের রাজনৈতিক পথচলায় বঙ্গবন্ধু কন্যার নেতৃত্বে স্বৈরশাসনের অবসান, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, বাঙালির ভাত ও ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা, বাংলাদেশের মানুষের জীবনের মানোন্নয়ন করে এক সময়ের দুর্ভিক্ষ জর্জরিত বাংলাদেশকে সারাবিশ্বে একটি আত্মমর্যাদাশীল ও উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে উন্নীত করেন।
শেখ হাসিনা বাংলাদেশের গণতন্ত্রের প্রতীক, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতীক, দেশের উন্নয়ন অগ্রগতির প্রতীক, বাঙালি সংস্কৃতির প্রতীক। তিনি একজন বাঙালি নারীর সত্যিকারের প্রতিচ্ছবি, যাকে দেখলে একজন বাঙালি নারী কেমন, সেটি দেখা যায়।
শেখ হাসিনার চিন্তাতে মানব কল্যাণ, পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠা, নেতৃত্বে দূরদৃষ্টি, গনতন্ত্রের প্রতি দৃঢ় অঙ্গীকার, সাধারণ মানুষের মুখে হাসি ফোটানো। জীবনের সব হারিয়ে যিনি মানুষের জন্য শান্তি খোঁজেন সমাজের মধ্যে, রাষ্ট্রের মধ্যে, বিশ্বের মধ্যে তিনি হলেন বঙ্গকন্যা, মুজিব কন্যা, বিশ্বশান্তির অগ্রদূত দেশরত্ন শেখ হাসিনা। রাজনীতিতে, মানবতার কল্যাণে, বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠায় শেখ হাসিনার হাতেই বিশ্ব শান্তির পতাকা শোভা পায়। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও শান্তির পক্ষে এবং সর্বপ্রকার সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে শেখ হাসিনার অবস্থান অত্যন্ত স্পষ্ট। শেখ হাসিনার নেতৃত্ব বাংলাদেশের সীমানায় আবদ্ধ না থেকে তা আজ বিশ্বসভায় উন্নীত ও যথাযোগ্য মর্যাদায় স্বীকৃত। শান্তি, উন্নয়ন, সহাবস্থান, বৈষম্য দূর ও মানবাধিকারের পক্ষে এবং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কী অভ্যন্তরীণ কী বৈদেশিক উভয়ক্ষেত্রে তাঁর নেতৃত্বের অবস্থান অত্যন্ত দৃঢ়।
যত অত্যাচার ষড়যন্ত্রই হোক অন্তর্বর্তী সরকার অচল হবেই। দেশ আজ গভীর এক সংকটময় সময় অতিক্রম করছে । বাঙালি বিরোধী বাংলাদেশ বিরোধী সকল অপশক্তি দেশকে ধ্বংস করে দিয়েছে। শেখ হাসিনার মতো দেশপ্রেমিক নেতা বাংলাদেশে বড় অভাব। বাংলাদেশের কঠিন সংকটকালীন সময় একজন শেখ হাসিনাকে ভীষণ প্রয়োজন। সকল বাধা অতিক্রম করে ১/১১ এ তৎকালীন তত্বাবধায়ক সরকারের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেছিলেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য শেখ হাসিনা বিকল্পহীন। শেখ হাসিনাকে বরণ করে নেয়ার জন্য প্রস্তুত বাংলাদেশ। ঐতিহাসিক এক প্রত্যাবর্তন দেখবে পুরো বিশ্ব। শেখ হাসিনার এই প্রত্যাবর্তন শুধু বাংলাদেশ আওয়ামী লিগের জন্য নয়, পুরো বাঙালি জাতির জন্য অবশ্যম্ভাবী এবং এটি ঘটবে খুব শীঘ্রই। আর একটি নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করবে। বর্তমান অবৈধ শাসক মব সন্ত্রাসের মাধ্যমে অসংখ্য আওয়ামী লিগ নেতাকর্মীদের হত্যা, খুন, নির্যাতন, নিপীড়ন, গ্রেফতার, মামলা এবং ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বীভৎস করে দেশকে আজ একটি অন্ধকারের দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। দেশের এই নাজুক পরিস্থিতিতে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামী লিগকে নিষিদ্ধ করে বর্তমান অবৈধ সরকার। আওয়ামী লিগকে স্বাধীনতার আগেও নিষিদ্ধ করেছিল কুখ্যাত পাকিস্তানি সরকার। তবে কোন নিষিদ্ধই বাংলার স্বাধীনতাকে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধ্বংস করতে পারবে না। আওয়ামী লিগ ফিরে আসবেই, কারণ আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক ভিত্তি এবং সমর্থন অত্যন্ত শক্তিশালী। আওয়ামী লিগের আন্দোলন-সংগ্রামের এই পথচলা কখনই কুসুমাস্তীর্ণ ছিল না, ছিল কণ্টকাপূর্ণ ও বিপদসংকুল। গণমানুষের মুক্তির লক্ষ্যে প্রথমে বঙ্গবন্ধু এবং তাঁর অবর্তমানে তাঁরই সুযোগকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নীতি ও আদর্শে অবিচল, দৃঢ় ও সাহসী থেকে সুখে-দুঃখে-দুর্যোগে দুর্বিপাকে-সর্বদা গণমানুষকে সঙ্গে নিয়ে- হামলা, মামলা, আঘাত ও ষড়যন্ত্র সহ সব প্রতিবন্ধকতা জয় করে এগিয়ে যাবেই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাই বাঙালির অহংকার, বিশ্বাস ভরসার আশ্রয়স্থল। বাংলাদেশ, বাঙালি জাতির প্রয়োজনেই শেখ হাসিনার প্রত্যাবর্তন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও জরুরি।
লেখক: বাংলাদেশ আওয়ামী লিগের সাংগঠনিক সম্পাদক।