সিলেটে হতাশাজনক হার। জিম্বাবুয়ে সাত বছর পর বাংলাদেশের মাটিতে জিতে আত্মবিশ্বাসে ছিল টইটুম্বুর। বিদেশের মাটিতে বিরল টেস্ট সিরিজ জয়ের স্বপ্ন এঁকেছিল তারা মনের ক্যানভাসে। কিন্তু বাংলাদেশ পাল্টা জবাব দিলো সর্বোচ্চটা দিয়ে। এতটাই আধিপত্য তারা দেখালো চট্টগ্রামে, সিলেটে হারের দুঃখও কিছুটা লাঘব হওয়া স্বাভাবিক।
প্রথম ইনিংসে তাইজুল ইসলাম, দ্বিতীয় ইনিংসে মেহেদী হাসান মিরাজের ঘূর্ণি জাদুতে ওলটপালট জিম্বাবুয়ের ব্যাটিং লাইনআপ। ১১১ রানে তাদের গুটিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ। সফরকারীদের প্রথম ইনিংসে উইকেটশূন্য থাকার আক্ষেপ মিরাজ ব্যাটিংয়ে নেমে পুষিয়ে দিয়েছেন দারুণ এক সেঞ্চুরিতে। মূলত তার ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ প্রায় সাড়ে চারশ রান তোলে। তারপর বল হাতেও দুর্দান্ত এই অফস্পিনার। সিলেটের পর চট্টগ্রামেও নিলেন পাঁচ উইকেট। তার সঙ্গে তাইজুলও নেন তিনটি উইকেট। তাতে ইনিংস ও ১০৬ রানে জিতে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ ১-১ এ সমতায় শেষ করলো স্বাগতিকরা।
মিরাজ ২১ ওভারে ৩২ রান দিয়ে পাঁচ উইকেট নেন। তাইজুল ১৬.২ ওভারে ৪২ রান খরচায় পান তিন উইকেট।
এর আগে ৭ উইকেটে ২৯১ রানে তৃতীয় দিনের খেলা শুরু করেছিল বাংলাদেশ। মিরাজ ১৬ ও তাইজুল ৫ রানে ক্রিজে নামেন। তাদের জুটি ভেঙে যায় দলীয় ৩৪২ রানে। এরপর অভিষিক্ত তানজিম হাসান সাকিবকে নিয়ে ৯৬ রানের অসাধারণ একে জুটি গড়ে মিরাজ রান পাহাড় গড়েন। তিনি ১০৪ রানে শেষ ব্যাটার হিসেবে মাঠ ছাড়েন। ৪১ রান করেন তানজিম। ৪৪৪ রানে প্রথম ইনিংসের সংগ্রহের পর বোলারদের দাপটে জিম্বাবুয়ে অলআউট হলো তৃতীয় দিনেই।
জয় থেকে আর এক উইকেট দূরে বাংলাদেশ, সময় বাড়লো ৩০ মিনিট
জয় থেকে আর একটি উইকেট দূরে বাংলাদেশ। মেহেদী হাসান মিরাজের উইকেট উৎসবের পর তাইজুল ইসলাম ৪৩তম ওভারে রিচার্ড এনগারাভাকে ডিপ মিড উইকেটে হাসান মাহমুদের ক্যাচ বানান। ২০ বলে ৫ রান করেন তিনি। ১০০ রানে ৯ উইকেট পড়ে জিম্বাবুয়ের। পরের বলে কট বিহাইন্ডের আপিল করে রিভিউ নিয়েও শেষ উইকেট নিতে পারেনি বাংলাদেশ।
সময় শেষ হয়ে গেলেও এক উইকেটের জন্য চতুর্থ দিনের খেলা না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আম্পায়াররা। আধঘণ্টা সময় বাড়ানো হয়েছে দিনের খেলার।
কারানকে চার রানের আক্ষেপে পুড়িয়ে মিরাজের ফাইফার
মেহেদী হাসান মিরাজ তার ঘূর্ণি জাদুতে জিম্বাবুয়েকে নাকানিচুবানি খাওয়াচ্ছেন। সফরকারীদের ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়ে বেন কারান হাফ সেঞ্চুরির পথে ছিলেন। তাকে চার রানের আক্ষেপে পোড়ালেন বাংলাদেশের অফস্পিনার। পাঁচ উইকেট তুলে নিলেন তিনি। ৪৬ রানে জাকের আলীর গ্লাভসে ধরা পড়েন কারান। ৯৮ রানে ৮ উইকেট পড়লো জিম্বাবুয়ের।
মিরাজের চতুর্থ শিকারে ভীষণ বিপদে জিম্বাবুয়ে
দুই উইকেট নিয়ে এক ওভার বিরতির পর আবার মিরাজ ঘূর্ণিজাদু দেখান। প্রথম বলে শর্ট লেগে ক্যাচ হয়েছে ভেবে আম্পায়ার আউট দিয়েছিলেন। তাফাদজওয়া সিগা রিভিউ নিয়ে বেঁচেছেন। পরের ওভারে অবশ্য একই রকম ডেলিভারিতে আর শেষ রক্ষা হয়নি। এবার বল ব্যাট স্পর্শ করে জমা পড়ে শর্ট লেগে থাকা এনামুল হকের হাতে। সিগা সাজঘরে ফেরেন শূন্যরানে। এটি ছিল মিরাজের তৃতীয় শিকার। এরপর ওয়েলিংটন মাসাকাদজাকে নিজের চতু্র্থ শিকার বানান মিরাজ। ১০ রানে তাকে তাইজুল ইসলামের ক্যাচ বানান। ৯৩ রানে সাত উইকেট হারালো জিম্বাবুয়ে।
মিরাজের জোড়া আঘাত
চতুর্থ উইকেটে প্রতিরোধ গড়েছিলেন অধিনায়ক ক্রেইগ আরভিন ও বেন কারান। ৪৭ রান যোগ করেন তারা। ২৯.১ ওভারে এসেই আরভিনকে বিদায় দিয়েছেন মিরাজ। এগিয়ে এসে মেরে খেলতে গিয়ে ২৫ রানে বোল্ড হয়েছেন আরভিন। তার পর ওভারের শেষ বলে নতুন ব্যাটার ওয়েসলি মাধেভেরেকেও লেগ বিফোরে ফেরান তিনি। জিম্বাবুয়ের ব্যাটার রিভিউ নিয়েও রক্ষা পাননি। ফলে ৬৯ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে প্রতিরোধ দুর্বল হয়ে পড়েছে সফরকারীদের।
আরভিনের ক্যাচ নিতে পারেননি শান্ত
দ্রুত তিন উইকেট হারিয়ে চাপে রয়েছে জিম্বাবুয়ে। তার পর থেকে জুটি গড়ে খেলছেন ক্রেইগ আরভিন ও বেন কারান। ১৯.৫ ওভারে এই জুটি ভাঙার সুযোগ এসেছিল। কিন্তু মেহেদী হাসান মিরাজের বলে ক্যাচ নেওয়ার সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি নাজমুল হোসেন শান্ত। তখন আরভিন ১৬ রানে ব্যাট করছিলেন।
চায়ের বিরতি থেকে ফিরে নাঈমের আঘাত
দ্বিতীয় ইনিংসের শুরুতেই জিম্বাবুয়েকে চাপে ফেলেছে বাংলাদেশ। চায়ের বিরতির আগে জোড়া আঘাত হানেন তাইজুল ইসলাম। বিরতি থেকে ফিরে এবার আঘাত হেনেছেন নাঈম হাসান। তার ঘূর্ণিতে ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন প্রথম ইনিংসের হাফসেঞ্চুরিয়ান শন উইলিয়ামস (৭)। স্পিনারদের আঘাতে তিন ব্যাটার ফিরেছেন সিঙ্গেল ডিজিটে।
জিম্বাবুয়ের দুই উইকেট তুলে চা বিরতিতে বাংলাদেশ
দ্বিতীয় ইনিংসে শুরুটা দেখে শুনে করেছিল জিম্বাবুয়ে। সপ্তম ওভারে সেই তাইজুল ইসলামের আঘাতে বদলে যায় দৃশ্যপট। তিন বলের ব্যবধানে দুটি উইকেট তুলে নিয়ে সফরকারীদের শুরুতে চাপে ফেলেছেন তিনি। শুরুর বলে ব্রায়ান বেনেটকে (৬) দ্বিতীয় স্লিপে তালুবন্দি করিয়েছেন। এক বল পর ওয়েলচকে ফেরান এলবিডাব্লিউতে। শুরুতে আম্পায়ার লেগ বিফোরের আবেদনে সাড়া দেননি। পরে রিভিউ নিয়ে মিলেছে সাফল্য। ওয়েল ফেরেন শূন্য রানে। তাতে ব্যাট হাতে দাপট দেখানোর পর দ্বিতীয় সেশনে বল হাতেও চলেছে বাংলাদেশের কর্তৃত্ব। চায়ের বিরতিতে যাওয়ার আগে জিম্বাবুয়ের দ্বিতীয় ইনিংসে সংগ্রহ ৯ ওভারে ২ উইকেটে ১৭ রান। ব্যাট করছেন শন উইলিয়ামস ৩ ও বেন কারান ৮। তারা এখনও পিছিয়ে ২০০ রানে।
১০৪ রানে থামলেন মিরাজ, বাংলাদেশ অলআউট ৪৪৪ রানে
গতকাল শেষ সেশনের বিপর্যয়ের পর তৃতীয় দিন দেখার ছিল বাংলাদেশ কতক্ষণ প্রতিরোধ গড়ে লিড বাড়িয়ে নিতে পারে। সেই লক্ষ্যে ভালোই সফল হয়েছে তারা। ২৭৯ রানে ৭ উইকেট হারানো বাংলাদেশের প্রথম ইনিংসে শেষ পর্যন্ত ৪৪৪ রানে থেমেছে। যার কারিগর মেহেদী হাসান মিরাজ। সকাল থেকে একপ্রান্তে দুর্গ গড়ে খেলেছেন তিনি। তাইজুল ও তানজিমকে নিয়ে গড়েছেন দুটি দুর্দান্ত জুটি। তাইজুলের সঙ্গে ৬৩ রানের জুটির পর লেজের দিকে সবচেয়ে বড় জুটিটা গড়েছেন তানজিম সাকিবকে নিয়ে। ৯৬ রানের সেই জুটিতেই লিড দুইশ ছাড়ায় বাংলাদেশের। তানজিমের আউটের পর দ্বিতীয় টেস্ট সেঞ্চুরি পাওয়া মেহেদী হাসান মিরাজের ইনিংস বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। ভিনসেন্ট মাসেকেসার বল এগিয়ে এসে খেলতে গিয়ে স্টাম্পড হয়েছেন ১০৪ রানে। এই উইকেট তুলেই অভিষেকে পাঁচ শিকারের নজির গড়েছেন জিম্বাবুয়ের লেগ স্পিনার। একটি করে নিয়েছেন ব্লেসিং মুজারাবানি, ওয়েলিংটন মাসাকাদজা, ওয়েসলি মাধেভেরে ও ব্রায়ন বেনেট।
বাংলাদেশ ৪৪৪ রানে গুটিয়ে যাওয়ায় এখন তারা এগিয়ে আছে ২১৭ রানে।
তানজিমের আউটের পর মিরাজের সেঞ্চুরি
নবম উইকেটে মেহেদী হাসান মিরাজকে দারুণ সঙ্গ দিয়েছেন পেসার তানজিম সাকিব। ৯৬ রানের জুটি গড়েন তারা। তাদের জুটিতে ভর করেই লিড দুইশ ছাড়ায় বাংলাদেশের। দুর্ভাগ্য ১২২.৫ ওভারে মাধেভেরের বলে রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে শর্ট লেগ ফিল্ডারের ক্যাচে পরিণত হন তানজিম। তাতে ৪১ রানে ফিরেছেন তিনি। তবে অপরপ্রান্তে দুর্গ গড়ে খেলা মিরাজ ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় টেস্ট সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন। ১৪৩ বলে স্পর্শ করেন তিন অঙ্ক।
রিভিউ নিয়ে রক্ষা পেলেন মিরাজ
বৃষ্টির কারণে দ্বিতীয় সেশনের খেলা শুরু হয় ১৫ মিনিট দেরিতে। খেলা শুরু হলে দারুণ খেলতে থাকা মিরাজকে ১১৭.৪ ওভারে এলবিডাব্লিউতে আউট দিয়েছিলেন আম্পায়ার। মিরাজ রিভিউ নিয়ে রক্ষা পেয়েছেন। টিভিতে দেখা গেছে, বল ব্যাটের কানায় লেগে প্যাডে আঘাত করেছিল।
চারশ পার করে লাঞ্চ বিরতিতে বাংলাদেশ
তৃতীয় দিন লিড বাড়িয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে বেশ ভালোভাবেই এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। প্রথম সেশনের শেষ দিকে আবার বৃষ্টি নামায় একটু আগে শেষ হয়েছে এই সেশন। চলছে লাঞ্চ বিরতি। তার আগে প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের স্কোর ছাড়িয়েছে চারশ। প্রথম সেশন শেষে তাদের সংগ্রহ ১১৪ ওভারে ৮ উইকেটে ৪০৪ রান। লিডও দাঁড়িয়েছে ১৭৭।
সকালের সেশনে কিছুক্ষণের জন্য বৃষ্টি বাগড়া দিলেও বাংলাদেশ তাদের লক্ষ্যে ছিল অবিচল। মাত্র একটি উইকেট হারিয়ে ১১৩ রান যোগ করেছে। যার পেছনে অবদান মেহেদী হাসান মিরাজের। গতকালের শেষ দিকে দলের বিপর্যয়ের পর প্রান্ত আগলে খেলছেন তিনি। তাকে যোগ্য সঙ্গ দেন তাইজুল ইসলাম। অষ্টম উইকেটে ৬৩ রান যোগ করেন তারা। তাইজুলের বিদায়ের পর এবার নবম উইকেটে পেসার তানজিম সাকিবকে নিয়ে ফিফটি প্লাস জুটি গড়ে এগিয়ে চলেছেন মিরাজ। এই জুটি বিরতিতে যাওয়ার আগে অবিচ্ছিন্ন ৬২ রানে। মিরাজ দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে ফিফটি তুলে সেঞ্চুরির পথে এগিয়ে যাচ্ছেন। ব্যাট করছেন ৭৬ রানে। ২৯ রানে ব্যাট করছেন তানজিম সাকিব।
দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে ফিফটি তুলে নিয়েছেন মিরাজ
গতকাল শেষ সেশনে হঠাৎ বিপর্যয়ের পর প্রান্ত আগলে খেলছেন মেহেদী হাসান মিরাজ। বাকিদের ব্যর্থতায় দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে লিড বাড়িয়ে নেওয়ার কাজটা করছেন তিনি। তাইজুল ফিরলেও ক্যারিয়ারের দশম ফিফটি তুলে ইনিংসে ভূমিকা রাখছেন। তিনি হাফসেঞ্চুরি স্পর্শ করেছেন ৭০ বলে।
৬৩ রানের জুটি ভাঙলো তাইজুলের বিদায়ে
তৃতীয় দিন লিড বাড়িয়ে নেওয়ার আশায় দারুণ খেলছিল মেহেদী হাসান মিরাজ ও তাইজুল ইসলাম জুটি। দ্রুত গতিতে রান তুলে লিড একশ ছাড়িয়েছে তারা। অষ্টম উইকেটে যোগ করেছে গুরুত্বপূর্ণ ৬৩ রান। দুর্দান্ত সেই জুটি ভেঙেছে তাইজুল ইসলামের বিদায়ে। ৯৬.৫ ওভারে লেগ স্পিনার মাসেকেসার বলে এগিয়ে এসে খেলতে গিয়ে বিপদ ডেকে আনেন তাইজুল। বলের লাইন মিস করেন তিনি। ফলে জিম্বাবুয়ে উইকেটকিপার তাকে স্টাম্পড করতে সময় নেননি। ৪৫ বলে দারুণ খেলতে থাকা তাইজুল বিদায় নেন ২০ রানে।
মিরাজ-তাইজুল জুটিতে একশ ছাড়ালো বাংলাদেশের লিড
তৃতীয় দিনের সকালের শুরুতে বৃষ্টিতে ১৭ মিনিটের মতো বন্ধ ছিল খেলা। তার পর খেলা শুরু হলে মেহেদী হাসান মিরাজ ও তাইজুল ইসলাম প্রতিরোধ গড়ে দলের লিড একশ ছাড়িয়েছেন। তাদের জুটিও পঞ্চাশ ছাড়িয়েছে।
লিড বাড়িয়ে নেওয়ার আশায় তৃতীয় দিন শুরু বাংলাদেশের
জিম্বাবুয়েকে ২২৭ রানে অলআউট করার পর বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে তাদেরকে দারুণ জবাব দিয়েছে। দ্বিতীয় দিন সাদমান ইসলামের সেঞ্চুরিতে ভর করে ৩ উইকেটে ২০৫ রানে চা বিরতিতে যাওয়া বাংলাদেশ শেষ সেশনে বিপর্যয়ের মুখে পড়ে। ২৫৯ থেকে ২৭৯ রানে চার উইকেট হারায় বিকালের সেশনে। ৭ উইকেটে ২৯১ রানে দিনের খেলা শেষ করে তৃতীয় দিন লিড সমৃদ্ধ করার আশায় স্বাগতিক দল। গতকাল তারা ৬৪ রানের লিড নিয়ে মাঠ ছেড়েছিল। ব্যাট করছেন মেহেদী হাসান মিরাজ ও তাইজুল ইসলাম।