আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড রোধে ব্যর্থ পুলিশ সদস্যদেরবিরুদ্ধে "কঠোর ব্যবস্থা" নেওয়ার হুমকি দিয়ে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রউপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর বিবৃতি উল্লেখযোগ্য আইনি ওসাংবিধানিক উদ্বেগের জন্ম দেয়। বাংলাদেশের সংবিধান এবংআন্তর্জাতিক আইন এর উপর ভিত্তি করে একটি বিশ্লেষণ এখানে দেওয়াহল:
১. বাংলাদেশে সাংবিধানিক কাঠামো: বাংলাদেশের সংবিধান বেশ কিছুমৌলিক অধিকার নিশ্চিত করে যা এই ধরনের আদেশ দ্বারা লঙ্ঘিতহতে পারে:
- সংগঠনের স্বাধীনতা (অনুচ্ছেদ ৩৮): নাগরিকদের রাজনৈতিক দলগঠন এবং শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের অধিকাররয়েছে। আওয়ামী লীগের কর্মকাণ্ডের উপর স্বেচ্ছাচারী নিষেধাজ্ঞা এইঅধিকার লঙ্ঘন করতে পারে।
সমাবেশের স্বাধীনতা (অনুচ্ছেদ ৩৭): শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ এবংরাজনৈতিক সমাবেশ সুরক্ষিত, যদি না তা জনশৃঙ্খলার জন্য হুমকিস্বরূপহয়। যুক্তিসঙ্গত কারণ ছাড়াই কম্বল নিষেধাজ্ঞা অসাংবিধানিক।
আইনের দৃষ্টিতে সমতা (অনুচ্ছেদ ২৭): একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলকে(যেমন, আওয়ামী লীগ) লক্ষ্যবস্তু করা বৈষম্যমূলক প্রয়োগ হতে পারে, যাসাংবিধানিক সমতার নীতি লঙ্ঘন করে।
আইনের শাসন (অনুচ্ছেদ ৭): সংবিধান নির্দেশ করে যে সমস্ত রাষ্ট্রীয়পদক্ষেপ আইন মেনে চলতে হবে। আইনি ভিত্তি ছাড়া স্বেচ্ছাচারী পুলিশিপদক্ষেপ এই নীতিকে দুর্বল করে।
মূল বিষয়: যদি আদেশটি রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়(অর্থাৎ, অবৈধ কাজের প্রমাণ ছাড়াই আওয়ামী লীগকে লক্ষ্যবস্তু করা), তবে এটি সম্ভবত এই সাংবিধানিক বিধানগুলি লঙ্ঘন করবে। তবে, যদিআওয়ামী লীগ সহিংসতা বা বেআইনি কার্যকলাপে জড়িত থাকে, তাহলেযুক্তিসঙ্গত বিধিনিষেধ প্রযোজ্য হতে পারে।
২. আন্তর্জাতিক আইনের দৃষ্টিকোণ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার চুক্তি এরঅধীনে বাংলাদেশ কর্তৃক অনুমোদিত:
ICCPR (ধারা ২১, ২২): সমাবেশ ও সংগঠনের স্বাধীনতা রক্ষা করে।যেকোনো নিষেধাজ্ঞা প্রয়োজনীয়, আনুপাতিক এবং বৈষম্যহীন হতে হবে।
- মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণাপত্র (ধারা ২০): শান্তিপূর্ণ সমাবেশ ওসংগঠনের অধিকার নিশ্চিত করে। রাজনৈতিকভাবে লক্ষ্যবস্তুতেনিষেধাজ্ঞা এটি লঙ্ঘন করতে পারে।
- শক্তি প্রয়োগের উপর জাতিসংঘের মৌলিক নীতি: পুলিশকে কেবলমাত্রশেষ অবলম্বন হিসেবে এবং হুমকির অনুপাতে বল প্রয়োগ করতে হবে।নিষ্ক্রিয় কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আগাম শাস্তিমূলক ব্যবস্থা অতিরিক্ত বলপ্রয়োগকে উৎসাহিত করতে পারে।
মূল বিষয়: যথাযথ প্রক্রিয়া বা ন্যায্যতা ছাড়াই রাজনৈতিক দলেরকার্যকলাপ দমনের জন্য একটি সম্পূর্ণ আদেশ বাংলাদেশেরআন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতা লঙ্ঘনের ঝুঁকি বহন করে।
৩. নজির এবং রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট:
- প্রাক্তন ক্ষমতাসীন দল হিসেবে আওয়ামী লীগ কর্তৃত্ববাদেরঅভিযোগের সম্মুখীন হয়েছে, কিন্তু এর সদস্যরা রাজনৈতিকঅংশগ্রহণের সাংবিধানিক অধিকার বজায় রেখেছে।
- অতীতের সরকারগুলি বিরোধী দলকে দমন করার জন্য বিশেষ ক্ষমতাআইন, ১৯৭৪ এর মতো আইন ব্যবহার করেছে, কিন্তু এই ধরনেরপদক্ষেপগুলিকে দমনমূলক এবং অসাংবিধানিক বলে সমালোচনা করাহয়েছে।
উপসংহার:
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার নির্দেশ সম্ভবত বাংলাদেশের সংবিধান এবংআন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করবে যদি:
১. এটি কেবলমাত্র রাজনৈতিক কারণে আওয়ামী লীগকে লক্ষ্য করেঅবৈধ কাজের প্রমাণ ছাড়াই।
২. এটি যথাযথ প্রক্রিয়া বা আনুপাতিকতা ছাড়াই পূর্ববর্তী পুলিশি ব্যবস্থাগ্রহণের নির্দেশ দেয়।
লেখক: জিয়া কবীর
মানবাধিকার কর্মী