বাংলা উর্দু English
 রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ৭ বৈশাখ ১৪৩২
বাংলা উর্দু English
রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫
শিরোনাম: ভবেশ চন্দ্রের মৃত্যু নিয়ে ভারতীয় মিডিয়ার সংবাদ বিব্রতকর: পুলিশ সুপার      ট্রাক-পিকআপ সংঘর্ষে ৪ জন নিহত      খনিজ সম্পদ নিয়ে সই হলো কিয়েভ-ওয়াশিংটন সমঝোতা স্মারক      সংঘর্ষে উড়ে গেছে বাসের ছাদ, তবু পাঁচ কিলোমিটার চালিয়ে গেলেন চালক      অর্থনৈতিক অপরাধে জড়িতদের বিচারে কমিটি হবে: সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান      জিম্মি মুক্তি দিলেই গাজা যুদ্ধ অবিলম্বে বন্ধ হবে: যুক্তরাষ্ট্র      বৈঠকের সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট নন, আবার আন্দোলনের ঘোষণা পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের      
অর্থনীতি
দুর্বল ব্যাংকের সংকট কতটা গভীরে
প্রকাশ: সোমবার, ১৭ মার্চ, ২০২৫, ১১:৩৫ এএম  (ভিজিটর : )
বাংলাদেশের ব্যাংক খাত এখন কঠিন সময় পার করছে। দুর্বল ব্যাংকের তালিকায় থাকা ১১টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৬টি কিছুটা ঘুরে দাঁড়ালেও অন্তত ৫টি এখনও চরম সংকটে রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, আমানতকারীদের উচিত ব্যাংকের আর্থিক স্থিতিশীলতা যাচাই করে তারপর আমানত রাখা।

ব্যাংকগুলোর বর্তমান অবস্থা


নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পর বাংলাদেশ ব্যাংক কয়েকটি ব্যাংকের পর্ষদ ভেঙে পুনর্গঠনের কাজ শুরু করে। এতে ব্যাংকগুলোর প্রকৃত অবস্থা প্রকাশ্যে আসছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর সম্প্রতি জানিয়েছেন, ইসলামী ব্যাংক ও ইউসিবি ব্যাংক ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে এবং তারা এখন নিজেরা টিকে থাকতে পারছে। তবে কিছু ব্যাংক এখনও গ্রাহকের আমানতের অর্থ ফেরত দিতে সমস্যায় পড়ছে।


সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত এমডি নাজমুস সাদাত জানিয়েছেন, তাদের ২০০টি শাখা ভালো অবস্থানে থাকলেও রমজানে গ্রাহকের বাড়তি টাকা উত্তোলনের কারণে সংকট দেখা দিয়েছে।

রমজানে নগদ টাকার সংকটে হিমশিম খাচ্ছে ব্যাংকগুলো

রমজান মাসে কেনাকাটা ও অতিরিক্ত খরচের কারণে ব্যাংক থেকে নগদ টাকা তোলার চাপ বেড়েছে। সমস্যায় থাকা কয়েকটি ব্যাংক এই বাড়তি চাহিদা সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে।

বিশেষ করে বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংকসহ ৫টি ব্যাংক এখনও চরম সংকটে আছে। এসব ব্যাংক প্রতিদিন তারল্য সহায়তার জন্য আবেদন করলেও বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের আর নতুন করে অর্থ সহায়তা দিচ্ছে না। ফলে গ্রাহকরা এখনও আমানত উত্তোলনে সমস্যায় পড়ছেন।

বিশেষ করে এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে থাকা ৪টি ব্যাংক সবচেয়ে বেশি সংকটে রয়েছে। এসব ব্যাংকের বেশিরভাগ ঋণ গোষ্ঠীগত স্বার্থে দেওয়া হয়েছে, যা এখন আর উদ্ধার করা সম্ভব হচ্ছে না। অভিযোগ আছে, ব্যাংকগুলোর আমানতের ৮০ শতাংশেরও বেশি মাত্র একটি ব্যবসায়িক গোষ্ঠীর কাছে কেন্দ্রীভূত ছিল, যা এখন ফেরত পাওয়া কঠিন হয়ে গেছে।

অর্থনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আগের সরকারের আমলে ব্যাংক খাতে ব্যাপক অনিয়ম ও লুটপাট হয়েছে। বিশেষ করে এস আলম গ্রুপের বিরুদ্ধে কয়েকটি ব্যাংক থেকে বিশাল অঙ্কের অর্থ তুলে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। প্রাথমিক হিসাবে বলা হচ্ছে, শুধু ইসলামী ব্যাংক থেকেই ১ লাখ ৫ হাজার কোটি টাকা তোলা হয়েছে। এছাড়া ইউনিয়ন ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকসহ আরও কয়েকটি ব্যাংক থেকে বড় অঙ্কের টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। এছাড়া, সালমান এফ রহমানের বিরুদ্ধে আইএফআইসি ব্যাংক থেকে ১২ হাজার কোটি টাকা এবং এক্সিম ব্যাংকের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদারের বিরুদ্ধে একাধিক ব্যাংক থেকে ৩৫ হাজার কোটি টাকা বের করে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।

দুই ব্যাংক পাচ্ছে আড়াই হাজার কোটি টাকা সহায়তা

ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের ঘনিষ্ঠ এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে থাকা ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক ব্যাপক আর্থিক সংকটে পড়েছে। গ্রাহকরা আমানত তুলতে সমস্যায় পড়ায় ব্যাংক দুটিকে নতুন করে আড়াই হাজার কোটি টাকা সহায়তা দিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, সংকট সামাল দিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নতুন টাকা ছাপিয়ে এ সহায়তা দেবে। বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) গভর্নর আহসান এইচ মনসুর এ অনুমোদন দিয়েছেন।

উল্লেখ্য, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলেন এস আলম গ্রুপের মালিক মোহাম্মদ সাইফুল আলম, আর সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলেন তার জামাতা বেলাল আহমেদ। আগের সরকারের আমলে এই ব্যাংকগুলো থেকে বড় অঙ্কের অর্থ বেরিয়ে যাওয়ার অভিযোগ রয়েছে।

যেসব ব্যাংকের অবস্থা এখনও নাজুক

বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ও ইউনিয়ন ব্যাংক এখনও তীব্র সংকটে রয়েছে। এসব ব্যাংকের বেশিরভাগ ঋণ গোষ্ঠীগত স্বার্থে দেওয়া হয়েছে, যা ফেরত পাওয়ার সম্ভাবনা কম। এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে থাকা ৪টি ব্যাংকের অবস্থা সবচেয়ে শোচনীয়।

যেসব ব্যাংক ঘুরে দাঁড়াচ্ছে

ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক (এসআইবিএল), এক্সিম ব্যাংক, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (ইউসিবি), আইএফআইসি ব্যাংক ও আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক ধীরে ধীরে স্থিতিশীল হচ্ছে। নতুন পরিচালনা পর্ষদ ও কঠোর নীতির ফলে তারা আমানতকারীদের আস্থা পুনরুদ্ধার করতে শুরু করেছে।

দুর্বল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনায় নতুন আইন আনছে সরকার

দেশের দুর্বল ব্যাংকগুলোর পরিচালনা ও অবসায়নের প্রক্রিয়া সহজ করতে অন্তর্বর্তী সরকার নতুন একটি আইন প্রণয়ন করতে যাচ্ছে। সংসদ না থাকায় এটি অধ্যাদেশ আকারে জারি করা হবে, যা আগামী জুলাইয়ের মধ্যে কার্যকর হতে পারে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ ইতোমধ্যে ‘ব্যাংক রেজুলেশন অধ্যাদেশ ২০২৫’-এর খসড়া প্রকাশ করেছে ।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ক্ষমতা বাড়বে

বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংকের হাতে সংকটে পড়া ব্যাংকগুলোর বিষয়ে কঠোর সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা নেই। নতুন অধ্যাদেশ কার্যকর হলে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক— কোনও দুর্বল ব্যাংকের ব্যবসায়িক কার্যক্রম সাময়িক স্থগিত করতে পারবে। প্রয়োজন হলে ব্যাংকের শেয়ার, সম্পদ ও দায় তৃতীয় পক্ষের কাছে হস্তান্তর করতে পারবে। নতুন শেয়ারধারকদের মাধ্যমে মূলধন বাড়ানোর নির্দেশ দিতে পারবে। ব্যাংকের মালিকদের অনিয়মের প্রমাণ পেলে কঠোর ব্যবস্থা নিতে পারবে।

এ ছাড়া, বাংলাদেশ ব্যাংক চাইলে ‘ব্রিজ ব্যাংক’ গঠন করতে পারবে, যা সংকটে থাকা ব্যাংকগুলোর সম্পদ ও দায় গ্রহণ করে পরিচালিত হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর জানিয়েছেন, এই আইন বাস্তবায়ন হলে সংকটে থাকা ব্যাংকগুলোর একীভূতকরণ, অধিগ্রহণ ও পুনঃমূলধনীকরণ সহজ হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের একাধিক কর্মকর্তা বলেছেন, ‘ব্যাংক রেজুলেশন আইন’ কার্যকর হলে সংকটাপন্ন  ব্যাংকের সম্পদ ও দায় হস্তান্তর, নতুন মালিকানা বা প্রশাসক নিয়োগ এবং প্রয়োজনে লিকুইডেশনের ব্যবস্থা রাখা হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ইতোমধ্যে স্পষ্টভাবে বলেছেন, সব ব্যাংক টিকে থাকতে পারবে না। বিশেষ করে যেসব ব্যাংক একক গোষ্ঠীর স্বার্থে পরিচালিত হয়েছে, সেগুলো রক্ষা করা কঠিন হবে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, দুর্বল ব্যাংকগুলোর আর্থিক অবস্থার উন্নতি না হলে কিছু প্রতিষ্ঠান টিকিয়ে রাখা কঠিন হতে পারে।

মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

বিশ্বকাপে বাংলাদেশের মেয়েরা
বাংলাদেশ ভ্রমণে যুক্তরাষ্ট্রের সতর্কতা জারি
যেসব পদক্ষেপে ঘুরে দাঁড়ালো রিজার্ভ
প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই পক্ষের সংঘর্ষে শিক্ষার্থী নিহত
আ.লীগের ঝটিকা মিছিল, বিপাকে পুলিশ

সর্বাধিক পঠিত

শেখ মুজিব একটি দেশ, একটি জাতি-রাষ্ট্রের স্রষ্ঠা
শেখ হাসিনার হাতে বাংলাদেশ থাকলে দেশকে আজ কাঁদতে হতো না
একাত্তরের ২৫ মার্চের অন্ধকার রাতের নৃশংসতার ফিরে আসা: ড. ইউনূসের শাসনে আগস্ট ২০২৪
সৌমিত্র দা আজ চলে গেছেন
লাকসাম উপজেলায় সিএনজি গ‍্যারেজের আড়ালে ভেজাল শিশু খাদ্য উৎপাদন।

অর্থনীতি- এর আরো খবর

PRIVACY POLICY
TERMS OF USE
CAB ALL RIGHTS RESERVED
সম্পাদক: মো: লোকমান হোসেন রাজু
Editor: MD Lokman Hossain Raju
Telephone: +1 267 222 8618
Email: [email protected]
[email protected]
Address: 2540 Oxford Court(Ground Floor)
Hatfield, PA 19440
USA
ফলো করুন চ্যানেল আমেরিকা বাংলা - খবর
© ২০২৪ - ২০২৫ চ্যানেল আমেরিকা বাংলা কর্তৃক সর্বসত্ব ® সংরক্ষিত
🔝